Advertisement |
ঠিক সেই মুহূর্তে একজন পেসার বললেন অদ্ভুত এক কথা। টিটোয়েন্টি আসার পর থেকেই বিশ্বব্যাপি বোলারদের দুঃসময়, ওয়ানডে আর টেস্টেও পেসারদের বিপক্ষে নানান বিধিনিষেধ। ব্যাটসম্যানদের দাপটে আর নানান রুলসে ক্রমশই কোণঠাসা হয়ে যাওয়া পেস বোলারদের একজন হয়েও, সেই পেসারটি টেলিভিশনে ইন্টার্ভিউ দিতে এসে জল ছলছল চোখে বললেন, -
'"আজ শুধুই মনে হচ্ছে কেন বাউন্সার দিতে হবে! শেষ পর্যন্ত খেলাটাতো বিনোদন। সেই খেলা যদি জীবন কেড়ে নেয়, তাহলে খেলে কি লাভ! হিউজের পরিবার কিভাবে এই ক্ষতি পোষাবে! কিংবা হিউজ, বেচারা ২৫ বছরেই শেষ হয়ে গেলো। এজন্যেই মনে হচ্ছে,নিষিদ্ধ করে দিকনা বাউন্সার! নাহয় আমরা পেসাররা মার খেলাম, তবু....!"
তার জলছলছল চোখজোড়া তিনি আড়াল করলেন। একজন পেসারের এমন কথা মানায়না। এমন প্রকাশ মানায়না। তাছাড়া, কোথাকার কোন ফিল হিউজ, তাতে আমাদের কি! তাকে নিয়ে এমন কথা বলা কী মানায়?
কিন্তু তিনি 'মানাবে', বা 'মানাবে না', সেকথা কী ভাবেন?
নাহ, ভাবেন না।
তিনি কেবল বুকের ভেতরের কথা ভাবেন, যেখানে হৃদয় ছুঁয়ে যায় অমিত ভালোবাসার, অনুভূতির স্নিগ্ধতম, শুদ্ধতম অকৃত্রিম স্পর্শে। তবুও তিনি তার চোখে জমা থইথই জল বান ডাকার আগেই লুকিয়ে ফেললেন। লুকিয়ে ফেললেন এমন আরও অজস্রবার।
মানুষটির নাম মাশরাফি বিন মর্তূজা!
শেষবার যখন তাসকিন আর সানি নিষিদ্ধ হল, তিনি সেবারও জল ছলছল চোখে কথা বলতে গিয়ে চোখ আড়াল করলেন। সেই চোখে জমে থাকা অশ্রুরা ঝড়ে পড়ে নি। কিন্তু চোখের কোলে আটকে থাকা সেই জলের ব্যাকুলতা, বুকের ভেতর জমে থাকা এক মানবিক হৃদয়ের আকুল স্পর্শ তারপরও ভাসিয়ে দিল টেলিভিশনের সামনে বসে থাকা তাবৎ দর্শকদের!
তারা ভাবল, একজন খেলোয়াড় এমন হয়?
একজন অধিনায়ক এমন হন??
আচ্ছা, এখনও এমন মানুষ আছেন! এতো বড় একজন ক্যাপ্টেন! এতো বড় একজন মানুষ! তিনি তার সহখেলোয়াড়দের জন্য এমন করেন ...!
হ্যাঁ করেন। কারণ এই হৃদয়হীন ভানের জগতে, এই অস্থির সময়েও তিনি বুকের ভেতর পুষে রেখেছেন মমতার থইথই সমুদ্র। সেই সমুদ্র ভাসিয়ে নিয়ে যায় আর সকল যোগবিয়োগের, নিয়ম কানুনের, হিসেব নিকেশের হিসেব।
কারণ, তিনি মাশরাফি! মাশরাফি বিন মর্তূজা।
মানবিক আবেগের জলে ভেজা বিশুদ্ধ এক নাম!
আজ যখন মাঠের মাঝখানে তার ওই পাগল ভক্ত মানুষটি অমন ছুটে এসেছিল, তখনও তিনি জানতেন, আঘাত নয়, তার জন্য প্রবল ভালোবাসা নিয়েই কেউ আসছে। কিন্তু মানুষটি নিয়ম ভেঙ্গেছেন, আর তার শাস্তিও তাকে পেতেই হবে। কিন্তু তিনি এও জানতেন, ওই মানুষটি আসলে বাংলাদেশের ষোলকোটি মানুষের প্রতিভূ। এই ষোলকোটি মানুষও তাকে অমন করেই বুকের সাথে জড়িয়ে ধরতে চায়। এই দেশের মানুষেরা তাকে বুকের ভেতর মুহূর্তখানেক জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে একজনমের সকল অপ্রাপ্তি ভুলে যেতে চায়।কারণ তিনি মাশরাফি। হয়তো তাই অমন নির্ভরতা দিয়ে, অমন প্রগাঢ় মমতা আর ছায়া দিয়ে, আড়াল দিয়ে পিতার মতন তিনি আগলে রেখেছিলেন অনাহুত ওই মানুষটিকেও। তিনি আসলে অমন করে আগলে রেখেছিলেন, আগলে আছেন এই বাংলাদেশকেও।হ্যাঁ, এই গোটা বাংলাদেশটাকেও!
কিন্তু কিভাবে!
কিভাবে?
ষোলকোটি মানুষের বুক খুঁড়ে কেউ দেখুক, সেখানে তিনি কেমন করে আছেন, কতোটাজুড়ে আছেন। কতোটা ভালোবাসায়, মমতায়, শ্রদ্ধায় অপার হয়ে আছেন!
~ সাদাত হোসাইন
0 comments: