Tuesday, October 4, 2016

খাদিজাকে কোপালো সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র বদরুল।

ad300
Advertisement
অদ্ভূত ব্যাপার না?
মেয়েটা যখন হাসপাতালে শুয়ে মারা যাচ্ছে তখনও একটা সরকারি মেডিকেলের হাসপাতালে শুয়ে ঘাতক নিরাপদেই সরকারি টাকার স্যালাইন ইনজেকশন পাচ্ছে। মানুষের ঘাম জরানো টাকার একটা অংশ দিয়ে কেনা স্যালাইন, ট্যাবলেট ঘাতকের শরীরে যাচ্ছে। সরকারি টাকায়, নির্ঘুম রাত জেগে পাশ করা ডাক্তাররা তার "সেবা" করতে বাধ্য হচ্ছে!
অদ্ভূত না?
হাঁ, অদ্ভূত। মানবতা এই জায়গায় অন্ধ।
সাস্ট থেকে এমসি কলেজের দূরত্ব কম হলেও পাঁচ কিলোমিটার। একটা ছেলে আরেকটা ক্যাম্পাসে গিয়ে রামদা দিয়ে একটা মেয়েকে কোপানোর সাহস কিভাবে পেল?
খুব সহজ উত্তর।
ছেলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা।
সে ক্যাম্পাসে নিশ্চয়ই কয়েকশ মিছিলে অংশ নিয়েছে। কয়েক হাজার বার "জয় বাংলা" স্লোগান দিয়েছে। ক্যাম্পাস বা শহরে তার কয়েক হালি প্রবল ক্ষমতাবান "বড়ভাই" আছেন।
"যে কোন দরকারে বড়ভাইকে পাশে পাবি" ধরনের স্নেহবাণী সে নিশ্চয়ই পেয়েছে।
এই ভালোবাসা এবং বিশ্বাস তাকে আশ্বস্ত করেছে যে তার কিছু হবে না। কয়েকটা কোপ দেবে, মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে আসবে। তারপরের ঝামেলার জন্য তো "বড়ভাইরা" আছেনই।
আমি উপস্থিত ছাত্র ছাত্রীদের ভূমিকা দেখে মোটেই অবাক হইনি এবং তাদেরকে কোন প্রকার দোষও দিতে রাজী নই।
একটা ঘটনার পর প্রচুর হিরোগিরি কথাবার্তা শোনা যায়, প্ল্যান মাথায় আসে। কিন্তু মুহুর্তের মধ্যেই যখন একটা ঘটনা ঘটে তখন সেটাকে প্রতিরোধ করার সাহস এবং সময় প্রায়ই হয়না।
একটা ছেলে একটা মেয়েকে হত্যা করছে, আপনি একা খালি হাতে কিভাবে রক্ষা করবেন?
পাঁচজন মিলে যাবেন?
বাকি চারজনের সাথে একাত্ম হতে সময় লাগবে না?
তারচেয়ে বড় কথা এখন মানুষের মনে ভয় প্রবল। প্রকাশ্যে হত্যাকারী একটা ছেলে নিশ্চয়ই সাধারণ কেউ নয়। তাকে উপস্থিত কেউ নিশ্চয়ই চিনত না।
কেউ জীবন বাজি রেখে আটকাতে গেল, পরে দেখা গেল সে পুলিশ কমিশনারের ছেলে কিংবা কোন এমপির শালা।
হিরোগিরির পরের যে ধাক্কা আসবে সেটা কে সামলাবে?
আপনি না আমি?
হাঁ, প্রতিরোধ করত পারত তারাই যারা স্থানীয় ক্ষমতাবান। একমাত্র এমসি কলেজ ছাত্রলীগ প্রতিরোধ করতে পারত।
আফসোস, হয় তারা ক্যাম্পাসে ছিল না কিংবা এটাকে প্রতিরোধ করা তাদের সিলেবাসের বাইরে।
একটা স্থানীয় সাস্ট ছাত্রের কাছে শুনলাম এই ছেলে আরেকবার একই মেয়েকে টিজ করতে গিয়ে গণপিটুনী খেয়েছিল। তারপর সে শিবিরের বিরুদ্ধে মামলা করে।
সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত নই, তবে শুনেছি সে জাফর ইকবাল স্যারেরও নাকি খুব কাছের ছাত্র। আগেরবার আহত হওয়ার পর স্যার নাকি দুঃখ করে বলেছিলেন ছেলেটা আর দাঁড়াতে পারবে না!
পুরো খবর জুড়ে ছাত্রলীগের নাম উঠে আসছে।
এই ঘটনার জন্য ছাত্রলীগ কতটা দায়ী?
ছাত্রলীগের মতো একটা বৃহৎ সংগঠনে কয়েক লাখ ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত কর্মী আছে। এই কয়েক লাখের মধ্যে সবাই নিশ্চয়ই কোপাকুপি করছে না।
গুণে দেখলে সারা দেশ জুড়ে এদের সংখ্যা কয়েক হাজারও নয়।
এদেরকে ছাঁটাই করা কি খুব বেশি অসম্ভব?
কেন সাস্ট ছাত্রলীগ এখনো বদরুলকে বহিষ্কার করছে না?
কেন এই ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ সর্বপ্রথম মিছিল বের করল না?
কেন এমসি কলেজ ছাত্রলীগ পুরো ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে কোন বিবৃতি দিল না?
প্রসঙ্গ এখানে ছাত্রলীগ না, প্রসঙ্গ এখানে ক্ষমতা।
বিএনপির সময় থাকলে ছাত্রদলের একই ভূমিকা থাকত এটা হলফ করে বলা যায়।
ভাই শোধরাবার সময় এখনো আছে।
আপনার হাতে ক্ষমতা আছে, ভালো কথা। সেটার অপব্যবহার নিজের জন্যই দুঃখ টেনে নিয়ে আসবে।
পৃথিবীর সব কিছুই চেইন রিএকশন মেনে চলে। ক্ষমতা চেইন রিএকশনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
আপনি সাস্ট ছাত্রলীগের নেতা। আপনার বোন পড়ছে জগন্নাথে। সেখানে কোন নেতার কাছে আপনার বোন লাঞ্চিত হবে না এর কোন গ্যারান্টি আছে?
আপনি এলাকার নেতা। আপনার বোন লাঞ্চিত হবে তার ক্যাম্পাসে। আপনার চেয়ে বড় নেতা আছে, আপনার চেয়েও বড় ক্ষমতাবান আছে।
যখন ক্ষমতার চেইনে আপনি নিচে পড়ে নির্যাতিত হবেন তখন মজা বুঝতে পারবেন।
মজা অবশ্যই বুঝতে পারবেন।
বিচারহীনতার ধারাবাহিক সংস্কৃতির কারণে এসব ঘটনা বাড়ছে এবং বাড়বে।
কারো মেয়ে বিষ খাবে, কেউ এভাবে রাস্তার পড়ে কোপ খাবে।
আমার মতো অথর্ব আম ফেসবুকার ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়ে দায়িত্ব শেষ করবে। কালকেই এসব আর কেউ মনে রাখবে না। কেবল যার যাবে সেই বুঝবে।
আমার দিনে আমি বুঝব, আপনার দিনে আপনি।
জাফর ইকবাল স্যারের প্রসঙ্গে যে কথাটা বললাম সেটার সত্যতা ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।
যদি কথাটা ভুল হয় তবে আমি দুঃখিত।
আর যদি সত্য হয় তবে জাফর ইকবাল স্যারের মতো একজন মনোবিদও একটা কিলারের চোখের দিকে তাকিয়ে তার মনোভাব বুঝতে পারেন নি এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।
আমি বদরুলের বিচার চাই বলে নিজেকে অপমান করতে চাই না। এই মুখস্ত বুলি যথেষ্ট বলা হয়েছে।
বরং আমি চাই কোন চিকিৎসকের ইচ্ছাকৃত ভুল চিকিৎসায় বদরুল মারা যাক।
কিংবা গত কয়েক দিন আগের মতোই সিলেট মেডিকেলে বাজ পড়ে সে মরুক।
সৃষ্টিকর্তার বঙ্গদেশীয় সৃষ্টির বিচারের উপর ভরসা বহু আগেই হারিয়েছি। এখন সরাসরি স্রষ্টার বিচার ছাড়া কিছুই সম্ভব না।
আবার ধরুন কোন কারণে যদি বদরুলের ফাঁসির রায় হয়ও, তাও অস্বস্তি যাবে না। মনে হবে আরে দূর, জামিনে এমনিই বের হবে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমা এমনিই পাবে।
আর সম্ভাবনা ০.০০০০০০০১% নিয়ে তার ফাঁসি যদি কার্যকর করা হয়ও, তারপরও অস্বস্তি কাটবে?
মোটেই না।
তখন মনে হবে নিশ্চয়ই এর লিংক দুর্বল ছিল। লাইন টাইনে ঘাটতি ছিল। এজন্যই ফাঁসি হয়ে গেছে।
বঙ্গদেশে মরার আগে পর্যন্ত কোন শান্তি নাই।
এটাই ফাইনাল।
Share This
Previous Post
Next Post

Pellentesque vitae lectus in mauris sollicitudin ornare sit amet eget ligula. Donec pharetra, arcu eu consectetur semper, est nulla sodales risus, vel efficitur orci justo quis tellus. Phasellus sit amet est pharetra

0 comments: